শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
হলুদ সায়রে
-এ কে সরকার শাওন
রাওথায় পদ্মার বিস্তীর্ণ ঢালে,
শর্ষে ক্ষেতের কোটি সোনা ফুলে;
নিজেকে গিয়েছিলাম বেমালুম ভুলে
সেদিনের সোনাঝরা পড়ন্ত বিকেলে!
হঠাৎ দৃষ্টি থমকে যায়,
মর্ত্যে এ কোন শশী অনতিদূরে!
আনত নয়নে হাসছে মিটিমিটি
শ্যামলী তম্বী ফুল-সায়রে!
সুবিন্যস্ত মেঘ কালো ঘন চুল;
অনন্ত রহস্যময়ী সেই উর্বশী!
দন্তমালার মুক্তার ঝিলিকে
তপোভঙ্গে নিঃস্ব হবেই ঋষি!
অঙ্গে জড়ানো নকশা খচিত
কলাপাতা সবুজ শাড়ী!
লাল আঁচল সুগ্রীবায় উড়ে
দিতে চায় আকাশে পাড়ি!
হঠাৎ হাত নেড়ে বারে বারে
ঈশারায় কাছে ডাকে মোরে!
আলোর আহ্বানে মন্ত্রমুগ্ধ
পতঙ্গের মত ছুটি তাঁর ধারে!
তাঁর যাদুকরী ছন্দবদ্ধ বাণী
মায়াবী চোখের তীর্যক তীর;
চারপাশের মিষ্টি মৌ মৌ ঘ্রাণে
সম্মোহিত আমি চুপচাপ স্থীর!
অবাক কান্ড, কোথায় দেখেছি,
তাঁকে খুব চেনা চেনা মনে হয়!
যেন তাঁর সাথে আছে গেথে
জন্ম জন্মান্তরের পরিচয়!
কিন্নরী কন্ঠে সুধাময়ী শুধালো,
“তুমি চিনোনি প্রাণ সজনীরে?
গত জনমে হারিয়েছো হেলায়
পৌষের শেষে এই প্রান্তরে!
ফুলে ফুলে ছেয়েছে চারপাশ
সেজেছে আকাশ সেজেছে ধরনী!
কান পেতে শোন সানাইয়ের সুরে
মিলনের প্রহর গুনছে শুভ যামিনী!
তাঁর হাতে হাত রেখে যবে
খোঁপায় গুঁজি ফুল ভালোবেসে!
“এবার আসি, ভালো থেকো;” বলে
হাওয়ায় মিলায় সে মৃদু হেসে!
সম্বিৎ ফিরে দেখি একাকী
শুনশান বিজন প্রান্তরে!
তরঙ্গে শিহরিত তনুমন
ভালোলাগায় গিয়েছে ভরে!
যে আছে অন্তরের অন্তরে
শত কোটি বছর ধরে;
জানি না সে কেমন করে
মুর্তিমান হলো ক্ষনিকের তরে!
যাকে হারিয়েছি পৌষের শেষে
রাওথার বিস্তীর্ণ হলুদ সায়রে!
তাঁকেই খুঁজে মরি বিশ্ব ঘুরে,
মেরু মরু গিরি প্রান্তরে!
কবিতা: হলুদ সায়রে
কাব্যগ্রন্থ: আলো-ছায়া
এ কে সরকার শাওন, ঢাকা।